ত্রিভুজ কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী

ভূমিকা

সুপ্রিয় পাঠক আজকাল অনেকেই অনলাইনে  ত্রিভুজ কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী বিষয় নিয়ে জানতে চান। আজ আপনিও হয়তো অনেক খোঁজাখুঁজির পর নিশ্চয়ই ত্রিভুজ কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী কি তা জানার জন্যই আমাদের এই সাইটটিতে এসেছেন।
ত্রিভুজ কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী
হ্যাঁ আজকে আমি সঠিকভাবে ত্রিভুজ কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। চলুন এই লেখার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ফেলি।

ত্রিভুজ কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী

ত্রিভুজ কাকে বলে?
ত্রিভুজ হল একটি ত্রি-বাহুবিশিষ্ট বহুভুজ। অর্থাৎ, এটি একটি সমতলে অবস্থিত তিনটি রেখাংশ দ্বারা আবদ্ধ একটি বদ্ধ আকৃতি। এই তিনটি রেখাংশকে ত্রিভুজের বাহু বলা হয় এবং যেখানে দুটি বাহু মিলিত হয়, তাকে শীর্ষবিন্দু বলা হয়।
ত্রিভুজ কত প্রকার?
ত্রিভুজকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ শ্রেণিবিন্যাস হল বাহু ও কোণের ভিত্তিতে।
বাহুর দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে:
  • সমবাহু ত্রিভুজ: এই ত্রিভুজের তিনটি বাহুই সমান দৈর্ঘ্যের।
  • সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ: এই ত্রিভুজের দুটি বাহু সমান দৈর্ঘ্যের এবং একটি বাহু আলাদা দৈর্ঘ্যের।
  • বিষমবাহু ত্রিভুজ: এই ত্রিভুজের তিনটি বাহুই ভিন্ন ভিন্ন দৈর্ঘ্যের।
কোণের মানের ভিত্তিতে:
  • সমকোণী ত্রিভুজ: এই ত্রিভুজের একটি কোণ 90 ডিগ্রি বা সমকোণ।
  • সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ: এই ত্রিভুজের তিনটি কোণই 90 ডিগ্রি-র চেয়ে কম।
  • স্থূলকোণী ত্রিভুজ: এই ত্রিভুজের একটি কোণ 90 ডিগ্রি-র চেয়ে বেশি।
নোট: একটি ত্রিভুজ একই সাথে বাহু ও কোণের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ত্রিভুজ একই সাথে সমবাহু ও সূক্ষ্মকোণী হতে পারে।
ত্রিভুজের গুরুত্ব:
ত্রিভুজ গণিতের একটি মৌলিক আকৃতি এবং এর বিভিন্ন ধর্ম ও বৈশিষ্ট্যের গভীর গবেষণা জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ভৌতিক বিজ্ঞান ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।

সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ কাকে বলে

সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ হল এমন একটি ত্রিভুজ যার প্রত্যেকটি কোণই ৯০° (সমকোণ) এর চেয়ে ছোট। অর্থাৎ, এই ত্রিভুজের কোনো কোণই সমকোণ বা স্থূলকোণ হবে না।
সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য:
  • প্রত্যেকটি কোণ ৯০° এর চেয়ে ছোট।
  • তিনটি বাহু ভিন্ন দৈর্ঘ্যের হতে পারে (বিষমবাহু), দুটি বাহু সমান দৈর্ঘ্যের হতে পারে (সমদ্বিবাহু) অথবা তিনটি বাহুই সমান দৈর্ঘ্যের হতে পারে (সমবাহু)।
  • সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন হতে পারে।
সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজের ব্যবহার:
সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ গণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ভৌতিক বিজ্ঞান ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি অনেক জ্যামিতিক সমস্যার সমাধানে এবং বস্তুর আকার ও আকৃতি নির্ণয়ে সহায়তা করে।
বাহুভেদে ত্রিভুজ কাকে বলে
বাহুভেদে ত্রিভুজ
ত্রিভুজের বাহুগুলির দৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে ত্রিভুজকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। আসুন, প্রতিটি ধরনের ত্রিভুজ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই:
১. সমবাহু ত্রিভুজ (Equilateral Triangle)
  • যে ত্রিভুজের তিনটি বাহুই সমান দৈর্ঘ্যের, তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলে।
বৈশিষ্ট্য:ত্রিভুজ কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী
  • তিনটি কোণই সমান (প্রত্যেকটি কোণ ৬০ ডিগ্রি)।
  • সবচেয়ে স্বতন্ত্র আকৃতির ত্রিভুজ।
২. সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ (Isosceles Triangle)
  • যে ত্রিভুজের দুটি বাহু সমান দৈর্ঘ্যের এবং একটি বাহু আলাদা দৈর্ঘ্যের, তাকে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ বলে।
বৈশিষ্ট্য:ত্রিভুজ কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী
  • সমান দৈর্ঘ্যের দুটি বাহুর বিপরীত কোণ দুটিও সমান।
৩. বিষমবাহু ত্রিভুজ (Scalene Triangle)
যে ত্রিভুজের তিনটি বাহুই ভিন্ন ভিন্ন দৈর্ঘ্যের, তাকে বিষমবাহু ত্রিভুজ বলে।
বৈশিষ্ট্য:
  • তিনটি কোণও ভিন্ন ভিন্ন।

সারণি: ত্রিভুজ কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী

ত্রিভুজের ধরন

বাহুর দৈর্ঘ্য

কোণের মান

সমবাহু

তিনটি বাহু সমান

তিনটি কোণ সমান (প্রত্যেকটি ৬০ ডিগ্রি)

সমদ্বিবাহু

দুটি বাহু সমান

সমান দৈর্ঘ্যের বাহু দুটির বিপরীত কোণ দুটি সমান

বিষমবাহু

তিনটি বাহু ভিন্ন

তিনটি কোণ ভিন্ন

আরো পড়ুনঃ

কোন ভেদে ত্রিভুজ কত প্রকার ও কী কী

ত্রিভুজের প্রকারভেদ
ত্রিভুজকে মূলত দুটি ভেদে ভাগ করা যায়:
১. বাহুর দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে:
ত্রিভুজের বাহুগুলির দৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে ত্রিভুজকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
সমবাহু ত্রিভুজ: 
  • যে ত্রিভুজের তিনটি বাহুই সমান দৈর্ঘ্যের, তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলে।
বৈশিষ্ট্য: তিনটি কোণই সমান (প্রত্যেকটি কোণ ৬০ ডিগ্রি)।
সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ: 
  • যে ত্রিভুজের দুটি বাহু সমান দৈর্ঘ্যের এবং একটি বাহু আলাদা দৈর্ঘ্যের, তাকে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ বলে।
বৈশিষ্ট্য: সমান দৈর্ঘ্যের দুটি বাহুর বিপরীত কোণ দুটিও সমান।
বিষমবাহু ত্রিভুজ: 
  • যে ত্রিভুজের তিনটি বাহুই ভিন্ন ভিন্ন দৈর্ঘ্যের, তাকে বিষমবাহু ত্রিভুজ বলে।
বৈশিষ্ট্য: তিনটি কোণও ভিন্ন ভিন্ন।
২. কোণের মানের ভিত্তিতে:
ত্রিভুজের কোণগুলির মানের উপর ভিত্তি করে ত্রিভুজকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ: 
  • যে ত্রিভুজের তিনটি কোণই ৯০° (সমকোণ) এর চেয়ে ছোট, তাকে সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ বলে।
বৈশিষ্ট্য: তিনটি কোণই সূক্ষ্মকোণ।
সমকোণী ত্রিভুজ: 
  • যে ত্রিভুজের একটি কোণ ৯০° (সমকোণ), তাকে সমকোণী ত্রিভুজ বলে।
বৈশিষ্ট্য: ৯০° কোণের বিপরীত বাহুকে অতিভুজ বলে।
স্থূলকোণী ত্রিভুজ:
  • যে ত্রিভুজের একটি কোণ ৯০° (সমকোণ) এর চেয়ে বড়, তাকে স্থূলকোণী ত্রিভুজ বলে।
বৈশিষ্ট্য: একটি কোণ স্থূলকোণ।
সমকোণী ত্রিভুজ কাকে বলে
সমকোণী ত্রিভুজ হল এমন একটি ত্রিভুজ যার একটি কোণ সমকোণ বা ৯০°। অর্থাৎ, যে ত্রিভুজের একটি কোণ সমকোণ এবং অন্য দুটি কোণের সমষ্টি এক সমকোণ বা ৯০° হলে তাকে সমকোণী ত্রিভুজ বলে।
সমকোণী ত্রিভুজের বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
  • অতিভুজ: সমকোণের বিপরীত বাহুকে অতিভুজ বলে। চিত্রে AC বাহুটি অতিভুজ।
  • লম্ব বা উচ্চতা: সমকোণের একটি বাহুকে লম্ব বা উচ্চতা বলে। চিত্রে AB বাহুটি লম্ব।
  • ভূমি: সমকোণের অপর বাহুকে ভূমি বলে। চিত্রে BC বাহুটি ভূমি।
  • পিথাগোরাসের উপপাদ্য: একটি সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রে, অতিভুজের দৈর্ঘ্যের বর্গ অন্য দুটি বাহুর দৈর্ঘ্যের বর্গের সমষ্টির সমান। অর্থাৎ, AC² = AB² + BC²।
সমকোণী ত্রিভুজের ব্যবহার:
সমকোণী ত্রিভুজ গণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ভৌতিক বিজ্ঞান ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি অনেক জ্যামিতিক সমস্যার সমাধানে এবং বস্তুর উচ্চতা, দূরত্ব নির্ণয়ে সহায়তা করে।
উদাহরণ:
  • একটি গাছের উচ্চতা নির্ণয় করতে
  • একটি ভবনের উচ্চতা নির্ণয় করতে
  • নৌকা থেকে কোনো বস্তুর দূরত্ব নির্ণয় করতে

ত্রিভুজ বলতে কি বুঝায়?

ত্রিভুজ হল একটি বদ্ধ দ্বিমাত্রিক আকৃতি যা তিনটি সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ। এই তিনটি সরলরেখাকে ত্রিভুজের বাহু বলা হয় এবং যেখানে দুটি বাহু মিলিত হয়, সেখানকে শীর্ষবিন্দু বলা হয়।
কোণভেদে ত্রিভুজ কত প্রকার?
ত্রিভুজের কোণগুলির মানের উপর ভিত্তি করে ত্রিভুজকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

ত্রিভুজের তিনটি কোণের মান কত?

একটি ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি সবসময় ১৮০° হয়।
অর্থাৎ, যদি একটি ত্রিভুজের তিনটি কোণকে A, B এবং C বলা হয়, তাহলে:
A + B + C = 180°
বিভিন্ন ধরনের ত্রিভুজের কোণের মান:
সমবাহু ত্রিভুজ: 
  • এই ত্রিভুজের তিনটি বাহু ও তিনটি কোণই সমান। তাই প্রতিটি কোণের মান হবে 180° ÷ 3 = 60°।
সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ: 
  • এই ত্রিভুজের দুটি বাহু ও দুটি কোণ সমান। সমান দৈর্ঘ্যের দুটি বাহুর বিপরীত কোণ দুটিও সমান হবে।
বিষমবাহু ত্রিভুজ: 
  • এই ত্রিভুজের তিনটি বাহু ও তিনটি কোণই ভিন্ন। তবে তিনটি কোণের সমষ্টি সবসময় 180° হবে।
উদাহরণ:
যদি একটি ত্রিভুজের দুটি কোণের মান যথাক্রমে 70° এবং 50° হয়, তাহলে তৃতীয় কোণের মান হবে:
180° - (70° + 50°) = 180° - 120° = 60°
ত্রিভুজের কয়টি অংশ ও কি কি?
একটি ত্রিভুজের মূলত তিনটি অংশ রয়েছে:
  • বাহু: ত্রিভুজের তিনটি সরলরেখা বা পাশকে বাহু বলে।
  • শীর্ষবিন্দু: যেখানে ত্রিভুজের দুটি বাহু মিলিত হয়, সেই বিন্দুকে শীর্ষবিন্দু বলে। একটি ত্রিভুজে তিনটি শীর্ষবিন্দু থাকে।
  • কোণ: দুটি বাহুর মধ্যবর্তী স্থানকে কোণ বলে। একটি ত্রিভুজে তিনটি কোণ থাকে।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক আজ ত্রিভুজ কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামীতে অন্য কোনো ভালো বিষয় নিয়ে হাজির হবো। আশা করছি উপরের ত্রিভুজ কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী বিষয়ে আলোচনা আপনার ভালো লেগেছে। আমাদের ফলো করে সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জমজম আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url