আদা বীজ কোথায় পাবো - বস্তায় আদা চাষের উপযুক্ত সময়
ভূমিকা
প্রিয় পাঠক আজকাল অনেকেই আদা বীজ কোথায় পাবো - বস্তায় আদা চাষের উপযুক্ত সময় বিষয় নিয়ে জানতে চান। আপনিও হয়তো অনেক খোঁজাখুঁজির পর নিশ্চয়ই আদা বীজ কোথায় পাবো - বস্তায় আদা চাষের উপযুক্ত সময় কি তা জানার জন্যই আমাদের এই সাইটটিতে এসেছেন।
হ্যাঁ আজকে আমি সঠিকভাবে আদা বীজ কোথায় পাবো - বস্তায় আদা চাষের উপযুক্ত সময় নিয়ে আলোচনা করব। চলুন এই লেখার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ফেলি।
আদা বীজ কোথায় পাবো
আদা বীজ কোথায় পাবেন, সেটা নির্ভর করবে আপনি কত পরিমাণে আদা বীজ কিনতে চান এবং আপনার অবস্থান কোথায়। আজ আমরা আদা বীজ কোথায় পাবো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। আদা বীজ কোথায় পাবো বিষয় নিয়ে জানতে হলে নিচের লেখাগুলো সম্পন্ন পড়ে ফেলুন।
আদা বীজ পাওয়ার বিভিন্ন জায়গা:
স্থানীয় বাজার:
- আপনার নিকটস্থ সবজি বা কৃষিজাত পণ্যের বাজারে সাধারণত আদা বীজ পাওয়া যায়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে অনেকেই তাদের বাড়ির বাগান থেকে আদা বীজ বিক্রি করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর:
- আপনার এলাকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে জানতে পারবেন কোথা থেকে ভালো মানের আদা বীজ পাওয়া যাবে। তারা প্রায়ই বিভিন্ন জাতের আদা বীজ সরবরাহ করেন।
নার্সারি:
- অনেক নার্সারিতে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজির বীজ পাওয়া যায়। সেখানেও আপনি আদা বীজ খুঁজে পেতে পারেন।
অনলাইন:
- বর্তমানে অনেক অনলাইন দোকানে বিভিন্ন ধরনের বীজ পাওয়া যায়। আপনি আপনার পছন্দমতো অনলাইন দোকান থেকে আদা বীজ কিনতে পারেন।
আদা বীজ কেনার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখবেন:
মান:
- আদা বীজ কেনার সময় ভালো মানের বীজ নিশ্চিত করুন। বীজগুলো সতেজ, পোকা মাকড় আক্রান্ত নয় এবং কোনো রোগের লক্ষণ নেই।
জাত:
- আপনি কোন জাতের আদা চাষ করতে চান, সেটা নির্বাচন করুন। বিভিন্ন জাতের আদার স্বাদ, গন্ধ এবং ফলন ভিন্ন হয়।
পরিমাণ:
- আপনার চাষের জন্য কত পরিমাণ আদা বীজ প্রয়োজন, সেটা নির্ধারণ করুন।
মূল্য:
- বিভিন্ন দোকানে আদা বীজের দাম ভিন্ন হতে পারে। তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে দাম জেনে নিন এবং আপনার বাজেট অনুযায়ী বীজ কিনুন।
আদা বীজ সংরক্ষণ:
আদা বীজ সাধারণত শুকনো এবং ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করা হয়। বীজকে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন।
বস্তায় আদা চাষের উপযুক্ত সময়
বস্তায় আদা চাষের উপযুক্ত সময়: আজ আমরা বস্তায় আদা চাষের উপযুক্ত সময় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।বস্তায় আদা চাষের উপযুক্ত সময় বিষয় নিয়ে জানতে হলে নিচের লেখাগুলো সম্পন্ন পড়ে ফেলুন।
বস্তায় আদা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ।
কেন এপ্রিল মাস উপযুক্ত?
আবহাওয়া:
- এপ্রিল মাসে সাধারণত আবহাওয়া উষ্ণ থাকে, যা আদার বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত।
মাটির তাপমাত্রা:
- এই সময় মাটির তাপমাত্রাও আদা রোপণের জন্য উপযুক্ত পর্যায়ে থাকে।
বৃষ্টিপাত:
- বৃষ্টিপাত কম থাকায় আদার মূল ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়।
কেন অন্য সময় না?
- শীতকাল: শীতকালে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকায় আদার বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায়।
- গ্রীষ্মকাল: গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া অতিরিক্ত গরম হলে আদার মূল পুড়ে যেতে পারে।
- বর্ষাকাল: বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে আদার মূল পচে যেতে পারে।
- বস্তায় আদা চাষ: বস্তায় আদা চাষের জন্য আপনাকে বিশেষ ধরনের মাটির মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এই মিশ্রণে গোবর সার, কম্পোস্ট, এবং কিছু রাসায়নিক সার মিশিয়ে নিতে হয়।
- পরিচর্যা: আদা চাষের সময় নিয়মিত পরিচর্যা করা খুবই জরুরি। এতে জল দেওয়া, সার দেওয়া, এবং আগাছা পরিষ্কার করা অন্তর্ভুক্ত।
- রোগবালাই: আদা চাষে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই হতে পারে। তাই রোগবালাই হলে তাড়াতাড়ি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
ছায়াযুক্ত স্থানে আদা চাষ
ছায়াযুক্ত স্থানে আদা চাষ: একটু ভিন্ন পদ্ধতি: আজ আমরা ছায়াযুক্ত স্থানে আদা চাষ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। ছায়াযুক্ত স্থানে আদা চাষ বিষয় নিয়ে জানতে হলে নিচের লেখাগুলো সম্পন্ন পড়ে ফেলুন।
সাধারণত আদা চাষের জন্য প্রচুর সূর্যের আলো প্রয়োজন হলেও, কিছু কৌশল অবলম্বন করে ছায়াযুক্ত জায়গায়ও আদা চাষ করা সম্ভব।
কেন ছায়াযুক্ত জায়গায় আদা চাষ করা যেতে পারে?
- বড় গাছের ছায়ায়: বাগানে বড় গাছ থাকলে তার ছায়ায় আদা চাষ করা যেতে পারে।
- বাড়ির উত্তর দিক: বাড়ির উত্তর দিকে সাধারণত সূর্যের আলো কম পড়ে। এখানেও আদা চাষ করা যেতে পারে।
- ছাদ বা বারান্দায়: বড় পাত্রে মাটি ভরে ছাদ বা বারান্দায় আদা চাষ করা যেতে পারে।
ছায়াযুক্ত জায়গায় আদা চাষের কৌশল
- মাটি: আদা চাষের জন্য ভালো জৈব সারযুক্ত মাটি প্রয়োজন। মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পচা গোবর মিশিয়ে নিন।
- পাত্র: বড় পাত্র বা বস্তায় আদা চাষ করতে পারেন।
- জলসেচ: মাটি সবসময় ভেজা রাখতে হবে। তবে অতিরিক্ত জল দিলে মূল পচে যেতে পারে।
- সার: নিয়মিত জৈব সার দিয়ে মাটিতে পুষ্টি যোগাতে হবে।
- গাছের আকার: ছায়াযুক্ত জায়গায় চাষ করা আদার গাছের আকার খোলা জায়গায় চাষ করা আদার তুলনায় ছোট হতে পারে।
সতর্কতা
রোগবালাই:
- ছায়াযুক্ত জায়গায় আদা চাষ করার সময় রোগবালাই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই নিয়মিত পরিদর্শন করে রোগবালাই দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
পর্যাপ্ত বাতাস:
- ছায়াযুক্ত জায়গায় চাষ করার সময় মাঝে মধ্যে গাছের আশেপাশে বাতাস চলাচল করার ব্যবস্থা করতে হবে।
মনে রাখবেন: ছায়াযুক্ত জায়গায় আদা চাষ করা একটু কঠিন হতে পারে। তবে সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।
আপনি যদি আরো বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে আপনার নিকটস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে পারেন।
আধুনিক পদ্ধতিতে আদা চাষ
আধুনিক পদ্ধতিতে আদা চাষ: উচ্চ ফলন ও গুণগত মানের নিশ্চয়তা: আজ আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে আদা চাষ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। আধুনিক পদ্ধতিতে আদা চাষ বিষয় নিয়ে জানতে হলে নিচের লেখাগুলো সম্পন্ন পড়ে ফেলুন।
আদা একদিকে যেমন রান্নার স্বাদ বাড়ায়, অন্যদিকে এর ঔষধি গুণও আছে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আদা চাষ করলে উচ্চ ফলন পাওয়া যায় এবং গুণগত মানও ভালো হয়। আসুন আধুনিক পদ্ধতিতে আদা চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
আধুনিক পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি:
জাত নির্বাচন:
- উচ্চ ফলনশীল ও রোগবালাই প্রতিরোধী জাতের আদা বীজ বেছে নিন।
মাটি প্রস্তুতি:
- জমি ভালোভাবে চাষ করে, গোবর সার, কম্পোস্ট এবং রাসায়নিক সার মিশিয়ে মাটির উর্বরতা বাড়ান।
বীজ শোধন:
- আদা বীজ রোপণের আগে ছত্রাকনাশক দিয়ে শোধন করুন।
রোপণ পদ্ধতি:
- সারি করে আদা বীজ রোপণ করুন। বীজের মধ্যে পর্যাপ্ত দূরত্ব রাখুন।
সিঁচাই ব্যবস্থা:
- আদা গাছকে নিয়মিত পানি দিন। কিন্তু জমিতে পানি জমতে দেবেন না।
আন্তঃচাষ:
- আগাছা পরিষ্কার করুন এবং মাঝে মাঝে মাটি আলগা করে দিন।
সার প্রয়োগ:
- নির্ধারিত সময়ে সার প্রয়োগ করুন।
রোগবালাই দমন:
- রোগবালাই দেখা দিলে তাড়াতাড়ি প্রতিকার ব্যবস্থা নিন।
ফসল সংগ্রহ:
- আদা গাছের পাতা শুকিয়ে গেলে ফসল তুলে নিন।
বস্তায় আদা চাষ:
- আধুনিক পদ্ধতির একটি উদাহরণ
সুবিধা:
- স্বল্প জায়গায় বেশি ফলন পাওয়া, রোগবালাই কম হয়, পরিচর্যা সহজ।
পদ্ধতি:
- একটি বড় বস্তায় মাটি, সার এবং আদা বীজ মিশিয়ে রোপণ করুন। নিয়মিত পানি দিন এবং সার দিন।
আধুনিক পদ্ধতির সুবিধা
আজ আমরা .আধুনিক পদ্ধতিতে আদা চাষ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। আধুনিক পদ্ধতিতে আদা চাষ বিষয় নিয়ে জানতে হলে নিচের লেখাগুলো সম্পন্ন পড়ে ফেলুন।- উচ্চ ফলন: আধুনিক পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণে আদা উৎপাদন করা সম্ভব।
- গুণগত মান: উৎপাদিত আদার গুণগত মান ভালো হয়।
- সময় ও শ্রম সাশ্রয়: আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে চাষাবাদ করা যায়।
- বাজার: উচ্চমানের আদার জন্য বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: আধুনিক পদ্ধতিতে আদা চাষ করার আগে কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
- জাতীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান: এখান থেকে উন্নত জাতের আদা বীজ সংগ্রহ করুন।
- সরকারি সহযোগিতা: সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা নিন।
- আধুনিক পদ্ধতিতে আদা চাষ করে আপনি নিজের চাহিদা মেটাতে পারবেন এবং বাণিজ্যিকভাবেও আদা চাষ করে লাভবান হতে পারবেন।
হাইব্রিড আদা চাষ
হাইব্রিড আদা চাষ:
- উচ্চ ফলন ও গুণগত মানের নিশ্চয়তা।
হাইব্রিড আদা হলো বিজ্ঞানীদের দ্বারা উন্নত একটি বিশেষ ধরনের আদা। এই আদাগুলো সাধারণত উচ্চ ফলনশীল, রোগবালাই প্রতিরোধী এবং ভালো গুণগত মানের হয়।
হাইব্রিড আদা চাষের সুবিধা:
- উচ্চ ফলন: সাধারণ আদার তুলনায় হাইব্রিড আদা থেকে অনেক বেশি ফলন পাওয়া যায়।
- রোগবালাই প্রতিরোধী: হাইব্রিড আদা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের রোগবালাইয়ের প্রতিরোধ ক্ষমতা রাখে।
- ভালো গুণগত মান: হাইব্রিড আদা সাধারণত বড় আকারের, রসালো এবং সুস্বাদু হয়।
- দীর্ঘদিন সংরক্ষণ: হাইব্রিড আদা দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
হাইব্রিড আদা চাষের পদ্ধতি:
হাইব্রিড আদা চাষের পদ্ধতি সাধারণ আদা চাষের মতই। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে:
জাত নির্বাচন:
- আপনার এলাকার জলবায়ু ও মাটির উপযোগী হাইব্রিড আদার জাত বেছে নিন।
মাটি প্রস্তুতি:
- মাটি ভালোভাবে চাষ করে, গোবর সার, কম্পোস্ট এবং রাসায়নিক সার মিশিয়ে মাটির উর্বরতা বাড়ান।
বীজ শোধন:
- আদা বীজ রোপণের আগে ছত্রাকনাশক দিয়ে শোধন করুন।
রোপণ পদ্ধতি:
- সারি করে আদা বীজ রোপণ করুন। বীজের মধ্যে পর্যাপ্ত দূরত্ব রাখুন।
সিঁচাই ব্যবস্থা:
- আদা গাছকে নিয়মিত পানি দিন। কিন্তু জমিতে পানি জমতে দেবেন না।
আন্তঃচাষ:
- আগাছা পরিষ্কার করুন এবং মাঝে মাঝে মাটি আলগা করে দিন।
সার প্রয়োগ:
- নির্ধারিত সময়ে সার প্রয়োগ করুন।
রোগবালাই দমন:
- রোগবালাই দেখা দিলে তাড়াতাড়ি প্রতিকার ব্যবস্থা নিন।
ফসল সংগ্রহ:
- আদা গাছের পাতা শুকিয়ে গেলে ফসল তুলে নিন।
হাইব্রিড আদা চাষের সুযোগ:
- উচ্চ মূল্য: হাইব্রিড আদার বাজার মূল্য সাধারণত বেশি হয়।
- বাণিজ্যিক চাষ: হাইব্রিড আদা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে ভালো লাভ করা যায়।
- রপ্তানি: হাইব্রিড আদা বিদেশে রপ্তানি করেও ভালো দাম পাওয়া যায়।
আধুনিক আদা চাষ
আজ আমরা আধুনিক আদা চাষ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। আধুনিক আদা চাষ. বিষয় নিয়ে জানতে হলে নিচের লেখাগুলো সম্পন্ন পড়ে ফেলুন।- আদা বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল। বাংলাদেশে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ২.৮৮ লক্ষ মেট্রিক টন আদা উৎপাদিত হয়। যা দেশের চাহিদার ৪.৮১ লক্ষ মেট্রিক টন এর তুলনায় খুবই নগন্য। আদার গড় ফলন ১১.২৮ টন/হেক্টর। এই ঘাটতি পুরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীগণ বারি আদা-১,
- বারি আদা-২,
- ও বারি আদা-৩ নামে তিনটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছেন।
- যার ফলন ৩০-৩৯ টন/হেক্টর। উৎপাদন কম হওয়ার কারন আদা চাষের উপযোগী জমির অভাব এবং কন্দ পঁচা রোগের ব্যাপক আক্রমণ হওয়া। কন্দ পঁচা রোগের কারণে আদার ফলন শতকরা ৫০-৮০ ভাগ পর্যন্ত কম হয়ে যায়। প্রতি বছর এদেশের জনসংখ্যা, আবাসনের জন্য ঘরবাড়ি, যোগাযোগের জন্য রাস্তা এবং কলকারখানা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে প্রেক্ষিত কারণে কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। বাংলাদেশে এই বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য নিশ্চয়তার জন্য শুধু আবাদি জমির উপর নির্ভর করলে হবেনা।
- এ পরিস্থিতিতে চাষ অযোগ্য পতিত জমি বা বসতবাড়ির চারদিকে অব্যবহৃত স্থান, লবনাক্ত এলাকা, খারকীয় এলাকা, নতুন ফল বাগানের মধ্যে বিল্ডিং এর ছাদে, বস্তায় আদা চাষ করে উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। বস্তায় আদা চাষ করে বাংলাদেশে যে আদার ঘাটতি রয়েছে তা সহজেই পূরণ করা সম্ভব।
বস্তায় আদা চাষের সুবিধা :
- যে কোন পরিত্যাক্ত জায়গা, বসত বাড়ির চারদিকে ফাঁকা জায়গা, লবনাক্ত এলাকা, বাড়ির ছাদে সহজেই চাষ করা যায়; একই জায়গায় বারবার চাষ করা যায়; এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ অনেক কম। প্রতি বস্তায় ২০-২৫ টাকা খরচ করে বস্তা প্রতি ১-২ কেজি আদা উৎপাদন করা যায়; এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করলে কন্দ পঁচা রোগ হয় না।
- যদিও কখনো রোগ দেখা যায় তখন গাছসহ বস্তা সরিয়ে ফেলা যায়, ফলে কন্দপঁচা রোগ ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা থাকে না; বস্তায় আদা চাষ করলে নিড়ানীসহ অন্যান্য পরিচর্যার তেমন দরকার হয় না ফলে উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়।
মাটি ও আবহাওয়া :
- জৈব পদার্থ সম্পৃক্ত দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ ও উচু জায়গা বস্তায় আদা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
বস্তায় মিশ্রন তৈরীর পদ্ধতি :
- সিমেন্টে খালি বস্তা মিশিয়ে বা অন্য বস্তায় আদা চাষের জন্য নিম্মলিখিত উপাদানগুলো একত্রে মিশিয়ে করে আদা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে একত্রে পালা/ডিবি করে, পলিথিন দ্বারা ঢেকে রাখতে হবে।
- যাতে বাতাস প্রবেশ না করে। প্রতি বস্তায় পরিমিত পরিমাণ মাটি, জৈবসার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে।
- মিশ্রন তৈরির সময় মাটি, গোবর, কম্পোস্ট, ছাই, টিএসপি, জিংক, বোরন সব একত্রে মিশিয়ে দিতে হবে। বালাইনাশক অর্ধেক এমওপি মিশ্রন তৈরির সময় দিতে হবে।
- চাহিদার অর্ধেক ইউরিয়া আদা রোপনের ৫০ দিন পর এবং বাকী অর্ধেক ইউরিয়া ও এমওপি সমানভাবে দুই কিস্তিতে রোপনের যথাক্রমে ৮০ দিন ও ১১০ দিন পর বস্তায় প্রয়োগ করতে হবে।
আদা রোপনের সময় :
- এপ্রিল-মে (চৈত্র- বৈশাখ) মাসে আদা লাগাতে হয়। তবে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ আদা লাগানোর উপযুক্ত সময়।
বস্তায় মিশ্রন ভরাট করা :
- বস্তায় আদা লাগানোর পূর্বে প্রতি বস্তায় তৈরিকৃত মিশ্রন এমনভাবে ভরাতে হবে যাতে বস্তার উপরের দিকে ১-২ ইঞ্চি ফাঁকা থাকে।
বস্তা সাজানোর/স্থাপন পদ্ধতি :
- ৩ মিটার চওড়া ও সুবিধা মত দৈর্ঘ্যর বেড তৈরি করতে হবে। একটি বেড থেকে অন্য বেডের মাঝখানে ৬০ সেমি: ড্রেন রাখতে হবে। ড্রেনের মাটি বেডের উপর দিয়ে বেডকে উচু করে নিতে হবে, যাতে বেডে বৃষ্টির পানি জমাট বেধে না থাকে।
- এরপর প্রতি বেডে ২ টি সারি এমন ভাবে করতে হবে, যেন এক সারি থেকে অন্য সারির মাঝে ১ মিটার দুরত্ব বজায় থাকে। প্রতি সারিতে ৮-১০ ইঞ্চি পর পর পাশাপাশি ২ টি বস্তা স্থাপন করতে হবে।
বীজের আকার ও রোপন পদ্ধতি :
- প্রতি বস্তায় ৪৫-৫০ গ্রামের একটি বীজ মাটির ভিতরে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি গভীরে লাগাতে হবে। বীজ লাগানোর পর মাটি দ্বারা ঢেকে দিতে হবে।
বীজ শোধন :
- বস্তায় আদা রোপনের পূর্বে ২ গ্রাম থ্রিরাম (৩৭.৫%)+ কার্বোক্সিন (৩৭.৫%) গ্রুপের প্রোভেক্স প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে, এক কেজি আদা বীজ এক ঘন্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর ভেজা আদা পানি থেকে উঠিয়ে ছায়ায় রেখে শুকিয়ে বস্তায় রোপণ করতে হবে।
আন্ত:পরিচর্যা :
- বস্তায় আদা চাষ করলে আগাছা তেমন হয় না। যদি আগাছা দেখা যায়, নিড়ানি দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। এছাড়া পরবর্তীতে সার প্রয়োগের সময় মাটি আলগা করে গাছের গোড়া থেকে দুরে সার প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ :
- বৃষ্টি না হলে বস্তায় প্রথম দিকে হালকা ভাবে ঝাঝরি দ্বারা অল্প পরিমাণে সেচ দিতে হবে। তবে বৃষ্টি স্বাভাবিক মাত্রায় হলে সেচের প্রয়োজন হয় না।
রোগ বালাই
কন্দ পঁচা রোগ :
- বর্ষাকালে গাছে এই রোগের লক্ষন দেখা যায়। গাছের নিচের দিকের পাতার প্রান্তভাগে প্রথমে হলুদাভ দেখায় এবং পর্যায়ক্রমে তা পাতার কিনারা ও পত্র ফলকের দিকে বিস্তার লাভ করে। গাছের পাতা হলুদ হয়ে গাছ ঝিমিয়ে পড়ে।
- পঁচনের ফলে কন্দ নরম হয়ে অভ্যন্তরীন টিস্যু সম্পূর্ণরুপে নষ্ট হয়ে যায়। আক্রান্ত রাইজম থেকে একধরনের গন্ধ বের হয়।
দমন পদ্ধতি :
- বীজ আদার জন্য শুধু সুস্থ ও রোগজীবাণু মুক্ত গাছ নিবার্চন করতে হবে; বীজ আদা রিডোমিল গোল্ড/প্রোভেক্স ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বীজ কন্দ শোধন করে রোপণ করতে হবে; যদি কোন কারণে গাছ আক্রান্ত হয় তবে অন্য গাছকে মুক্ত রাখার নিশ্চিতকরণ করতে হবে।
পোকামাকড় :
- বাড়ন্ত গাছে পাতাখেকো পোকা অনেক সময় পাতার ব্যাপক ক্ষতি করে ফলে এবং গাছের সালোকসংশ্লেষন হ্রাস পায়। এতে ফলন কমে যায়।
দমন পদ্ধতি :
- এ পোকা দমনের জন্য ১০-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার বিকাল বেলায় ০.৫% হারে মার্শাল প্রতি লিটার হারে ডাস্টবার্ন বা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের ঔষধ স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ :
- সাধারনত জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মাসে বস্তা থেকে আদা উঠানো হয়। আদা পরিপক্বতা লাভ করলে গাছের পাতা ক্রমশ হলুদে হয়ে কা- শুকাতে শুরু করে। এ সময় তুলে মাটি ঝেড়ে ও শিকড় পরিস্কার করে সংরক্ষণ করা হয়।
ফলন :
- সাধারণত প্রতি বস্তায় জাত ভেদে ১-৩ কেজি পর্যন্ত আদার ফলন পাওয়া যায়।
বীজ আদা সংরক্ষণ :
- বীজ আদা ছায়াযুক্ত স্থানে মাটির নিচে গর্ত বা পিট তৈরি করে সংরক্ষণ করা হয়। গর্তের নীচে ১ ইঞ্চি পরিমাণে বালু দিয়ে তার উপর বীজ আদা রেখে মাটি দ্বারা ঢেকে দিতে হবে।
- এতে করে বীজ আদা শুকিয়ে ওজন কমার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
লেখক : ড. মোঃ আশিকুল ইসলাম,ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া
উপসংহার
প্রিয় পাঠক আজ আদা বীজ কোথায় পাবো - বস্তায় আদা চাষের উপযুক্ত সময় নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামীতে অন্য কোনো ভালো টপিক নিয়ে হাজির হবো। আশা করছি উপরের আদা বীজ কোথায় পাবো - বস্তায় আদা চাষের উপযুক্ত সময় আলোচনা আপনার ভালো লেগেছে। যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানান আর আপনার ফ্রেন্ড সার্কেলে এই কনটেন্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। আমাদের ফলো করে সাথেই থাকুন।
জমজম আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url