শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
ভূমিকা
প্রিয় পাঠক আজকাল অনেকেই শব-ই-মেরাজ কি এবং এর তাৎপর্য বিষয় নিয়ে জানতে চান। আপনিও হয়তো অনেক খোঁজাখুঁজির পর নিশ্চয়ই শব-ই-মেরাজ কি এবং এর তাৎপর্য কি তা জানার জন্যই আমাদের এই সাইটটিতে এসেছেন।
হ্যাঁ আজকে আমি সঠিকভাবে শব-ই-মেরাজ কি এবং এর তাৎপর্য তা নিয়ে আলোচনা করব। এই লেখার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।
শব-ই-মেরাজ কি?
শব-ই-মেরাজ অর্থ "উর্ধ্বগমনের রাত"। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, কারণ এই রাতে ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঐশ্বরিক উপায়ে উর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
কখন ঘটেছিল:
ঐতিহাসিকদের মতে, শবে মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল হিজরতের দশম বছরের রজব মাসের ২৭ তারিখে। তবে, কিছু আলেম মনে করেন এটি ষষ্ঠ বছরে সংঘটিত হয়েছিল।
ঘটনার বিবরণ:
হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) মসজিদুল হারাম থেকে বোরাক নামক এক অলৌকিক বাহনে চড়ে মসজিদুল আকসায় যান। সেখান থেকে জ্বিবরাইল (আঃ)-এর সঙ্গে সপ্ত আসমান ভ্রমণ করে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছান।
এই সফরের সময় তিনি জান্নাত, জাহান্নাম এবং আল্লাহর কিছু বিশেষ নিদর্শন দেখতে পান। আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং পঞ্চ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়। এরপর তিনি পৃথিবীতে ফিরে আসেন।
শব-ই-মেরাজের তাৎপর্য
ঈমানের শক্তি: শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত এই ঘটনা একজন ঈমানদারের ঈমানের শক্তি ও আল্লাহর অসীম ক্ষমতার প্রমাণ।
- নবুওয়তের সত্যতা
- আল্লাহর সাথে নবীর নৈকট্য
- মানুষের জন্য শিক্ষা
- আশার বার্তা
শবে মেরাজ মুসলমানদের কাছে একটি বিশেষ রাত। এই রাতে তারা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে, যেমন নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও জিকির।
শব ই মেরাজ এর রোজা
শবে মেরাজের রোজা রাখার ব্যাপারে ইসলামী শরীয়তে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই।
যারা রোজা রাখেন:
অনেকে মনে করেন, যেহেতু শবে মেরাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, তাই এই রাতে রোজা রাখা উত্তম।
কিছু হাদিসে রোজা রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূল (সাঃ) নিজেও এই রাতে রোজা রেখেছিলেন বলে কিছু সাহাবী বর্ণনা করেছেন।
যারা রোজা রাখেন না:
অন্যদিকে, কিছু আলেম মনে করেন শবে মেরাজের রোজা রাখা ওয়াজিব বা সুন্নত নয়। তারা যুক্তি দেখান যে, শরীয়তে নির্দিষ্ট কিছু রোজা ছাড়া অন্য রোজা রাখা মুস্তাহাব (প্রস্তাবিত)। রাসূল (সাঃ) শবে মেরাজের রোজা নিয়মিত রাখেননি বলেও তারা উল্লেখ করেন।
রোজা রাখার নিয়ম:
যারা শবে মেরাজের রোজা রাখতে চান, তারা ২৬ রজব সূর্যাস্তের পর থেকে ২৭ রজব সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখতে পারেন।
রোজার নিয়ত করার সময় বলতে হবে, "আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শবে মেরাজের রোজা রাখছি।"
রোজার সাথে সাথে নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও জিকির করাও উত্তম।
উল্লেখ্য:
শবে মেরাজের রোজা রাখা বা না রাখা ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। রোজা রাখার ক্ষেত্রে শরীরের সক্ষমতা বিবেচনা করা জরুরি। রোজা রাখার বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকলে একজন আলেমের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
শব ই মেরাজ এর ইতিহাস
শবে মেরাজ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই রাতে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঐশ্বরিক উপায়ে উর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
রোজা রাখা বা না রাখা ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। রোজা রাখার ক্ষেত্রে শরীরের সক্ষমতা বিবেচনা করা জরুরি। রোজা রাখার বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকলে একজন আলেমের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
শবে মেরাজ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাতে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঐশ্বরিক উপায়ে উর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
গুরুত্ব:
- ঈমানের শক্তি
- নবুওয়তের সত্যতা
- আল্লাহর সাথে নবীর নৈকট্য
- মানুষের জন্য শিক্ষা
- আশার বার্তা
- ফজিলত
- গুনাহ মাফের রাত
- দোয়া কবুলের রাত
- আল্লাহর রহমত লাভের রাত
- নামাজ ও তেলাওয়াতের রাত
শবে মেরাজের রাতে আমল
- নামাজ
- কুরআন তেলাওয়াত
- দোয়া ও জিকির
- নফল রোজা
উল্লেখ্য:
রোজা রাখা বা না রাখা ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। রোজা রাখার ক্ষেত্রে শরীরের সক্ষমতা বিবেচনা করা জরুরি। রোজা রাখার বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকলে একজন আলেমের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
শবে মেরাজ মুসলিমদের জন্য একটি বিশেষ রাত। এই রাতে আল্লাহর বিশেষ রহমত বর্ষিত হয়। তাই এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকা উচিত।
মেরাজের ঘটনা কোন সূরায় আছে
মেরাজের ঘটনা পবিত্র কুরআনের দুটি সূরায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:
১. সূরা ইসরা (বনী ইসরায়েল):
এই সূরার ১ থেকে ১১ নং আয়াতে মেরাজের ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এই সূরায় বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন।
এরপর তাকে সপ্তম আসমান, সিদরাতুল মুনতাহা এবং আরশে আজিম পর্যন্ত আরোহণ করানো হয়েছিল। এই সূরায় আরও বলা হয়েছে যে, মেরাজের সময় হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ তায়ালার অনেক নিদর্শন দেখেছিলেন।
২. সূরা নাজম:
এই সূরার ১ থেকে ১৮ নং আয়াতে মেরাজের ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এই সূরায় বলা হয়েছে যে, হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) সত্যিই মেরাজ করেছিলেন এবং এটি ছিল একটি সত্য ঘটনা।
এই সূরায় আরও বলা হয়েছে যে, মেরাজের সময় হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) জিবরাইল (আঃ)-এর সাথে দেখা করেছিলেন। এছাড়াও, কুরআনের আরও কিছু সূরায় মেরাজের ঘটনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য:
মেরাজের ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।এই ঘটনা মুসলিমদের ঈমান ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে।
মেরাজের ঘটনা মুসলিমদের জন্য একটি আশার বার্তা, যা তাদেরকে জীবনের সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা যোগায়।
শবে মেরাজের রোজা কয়টি
শবে মেরাজের রোজা সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত প্রচলিত রয়েছে।
ক) কুরআন ও হাদিসের আলোকে:
কুরআন ও হাদিসে শবে মেরাজের রোজা রাখার স্পষ্ট নির্দেশ নেই।
নবীজি (সাঃ) নিজে শবে মেরাজের রোজা রাখেননি।
সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) শবে মেরাজের রোজা রাখেননি।
খ) কিছু আলেমদের মতামত:
কিছু আলেম মনে করেন শবে মেরাজের রোজা রাখা মুস্তাহাব (প্রস্তাবিত)।
তারা মনে করেন, এই রাতে রোজা রাখলে অধিক সওয়াব পাওয়া যায়।
তবে তারা স্পষ্ট করে বলেছেন, এটি বাধ্যতামূলক নয়।
গ) অন্যান্য মতামত:
কিছু লোক মনে করে শবে মেরাজের রোজা রাখা ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক)।
এই মতামতটি সঠিক নয়, কারণ এর সপক্ষে কোনো সহীহ হাদিস নেই।
শবে মেরাজের রোজা রাখা ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। যদি কেউ রোজা রাখতে চায়, তাহলে সে রাখতে পারে। তবে কেউ যদি রোজা না রাখে, তাহলে তার কোনো গুনাহ হবে না।
২০২৪ সালের শবে বরাত, রমজান, শবে কদর ও ঈদ কবে?
চলুন আজ আমরা ২০২৪ সালের শবে বরাত, রমজান, শবে কদর, ঈদ ও হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিধানগুলো কবে, কত তারিখে পালন করতে হবে তা আপনার সুবিধার জন্য এখানে সম্ভাব্য তারিখ তুলে ধরলাম।
পবিত্র শব-ই-বরাত-২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালের, সোমবার।
২০২৪ সালের বিশ্ব ইজতেমা- ২-৪ ফেব্রুয়ারি ও ৯-১১ ফেব্রুয়ারি।
শব-ই-মেরাজ- ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালের, শুক্রবার।
রমজান -১১ মার্চ ২০২৪ সালের, সোমবার, শাবান মাসের শেষে রমজানের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।
জুমাতুল বিদা- ৫ এপ্রিল, ২০২৪ সালের শুক্রবার।
শব-ই-কদর- ৬ এপ্রিল, ২০২৪ সালের শনিবার।
১০ অথবা ১১ এপ্রিল, ঈদুল ফিতর- বুধ-বৃহস্পতিবার, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে।
১৬ অথবা ১৮ জুলাই, ঈদুল আজহা- (রোববার-মঙ্গলবার, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে।)।হজ- চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ১৫ জুন থেকে শুরু হতে পারে।
আশুরা - ১৭ জুলাই, (বুধবার)।
১৬ সেপ্টেম্বর, ঈদে মিলাদুন্নবী- (সোমবার)।
আরবি মাস ইসলামি ক্যালেন্ডারের প্রত্যেক মাস শুরুর তারিখ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে নির্ধারিত হয়। প্রতি রমজান, ঈদ, হজ, শবে বরাত, শবে কদর, শবে মেরাজ, আশুরার দিনগুলো মূলত চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে। এখানে ক্যালেন্ডারে উল্লেখিত সরকারি ছুটির সম্ভাব্য তারিখের ভিত্তিতে রমজান, ঈদ ও অন্যান্য বিশেষ ইবাদতের দিনগুলো তুলে ধরা হয়েছে। আরবি মাসে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক আজ আমরা শব-ই-মেরাজ কি এবং এর তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামীতে অন্য কোনো ভালো টপিক নিয়ে হাজির হবো। আশা করছি উপরের আলোচনা আপনার কাজে লেগেছে যদি কাজে লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানান আর আপনার ফ্রেন্ড সার্কেলে এই কনটেন্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
জমজম আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url