শীতের কিছু জনপ্রিয় পিঠা - ভাপা পিঠা তৈরির নিয়ম
ভূমিকা
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক জমজম আইটির পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আপনি অনেক
খোঁজাখুজির পর নিশ্চয়ই শীতের কিছু জনপ্রিয় পিঠা - ভাপা পিঠা তৈরির
নিয়ম, শীতকালের পিঠার নাম কি তা জানার জন্যই আমাদের এই সাইটটিতে
এসেছেন।
হ্যাঁ আজকে আমি সঠিকভাবে শীতের কিছু জনপ্রিয় পিঠা - ভাপা পিঠা তৈরির নিয়ম,
শীতকালের পিঠার নাম নিয়ে আলোচনা করব। এই লেখার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে
পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।
শীতের কিছু জনপ্রিয় পিঠা বা ভাপা পিটা তৈরির নিয়ম
বাঙালি যে সকল খাবার খেতে ভালোবাসে তার মধ্যে পিটা পুিল অন্যতম।পিঠা ভালোবাসে না
এমন মানুষ কমই আছে,এটা প্রতিদিনের খাবার না হলেও শীতের সময় বাঙালির ঘরে পিঠার
বেশ কদর আছে। আপনি নিশ্চয়ই শীতের পিঠা তৈরি করা নিয়ে ভাবছেন? ভাবনার কোন কারণ
নেই এখন শীতের কিছু জনপ্রিয় পিঠা পুলি তৈরি করার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব।
আপনি যদি শীতের কিছু জনপ্রিয় পিঠা তৈরি করার কথা চিন্তা করেন তাহলে আমি বলব আপনি
সঠিক জায়গায় এসেছেন।আপনি যদি আমার এই লেখনি পুরোপুরি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে
শীতের বেশ কিছু জনপ্রিয় পিটা তৈরির নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন, চলুন সময় নষ্ট
না করে শুরু করা যাক।
শীতে আমরা সাধারণত বিভিন্ন প্রকার পিঠা তৈরি করে থাকি পিঠা ছাড়া শীত যেন অপূর্ণ
থেকে যায়।হেমন্তের নতুন ধরনের পিঠা পায়েসএবং বিভিন্ন রকম খাবার তৈরি করা হয়
ঘরে ঘরে।প্রতিটি পাড়া মহল্লা নতুন চালের পিটাতে ধুম পড়ে যায়। সারা গ্রাম গঞ্জে
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পিঠার অবস্থান যেন বাঙালির দেশীয় ঐতিহ্য বহন করে।
শীতকালের পিঠার নাম
বাংলাদেশে শীতকালে নানা ধরনের পিঠা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে কিছু জনপ্রিয় পিঠার
নাম হল:
চিতই পিঠা:
চিতই পিঠা হল সবচেয়ে জনপ্রিয় পিঠার মধ্যে একটি। চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি এই
পিঠাকে তেলে ভেজে বা ভাপে রান্না করা যায়। চিতই পিঠার বিভিন্ন রকমভেদ রয়েছে,
যেমন দুধ চিতই, রস চিতই, ডিম চিতই, কলা চিতই, ইত্যাদি।
ভাপা পিঠা:
ভাপা পিঠাও একটি জনপ্রিয় পিঠা। চালের গুঁড়া, নারকেল, চিনি, ইত্যাদি দিয়ে তৈরি
এই পিঠাকে ভাপে রান্না করা হয়। ভাপা পিঠার বিভিন্ন রকমভেদ রয়েছে, যেমন রস ভাপা,
দুধ ভাপা, নারকেল ভাপা, ঝাল ভাপা, ইত্যাদি।
পুলি পিঠা:
পুলি পিঠা হলো এক ধরনের মিষ্টি পিঠা। চালের গুঁড়া, নারকেল, চিনি, ইত্যাদি দিয়ে
তৈরি এই পিঠাকে তেলে ভেজে বা ভাপে রান্না করা যায়। পুলি পিঠার বিভিন্ন রকমভেদ
রয়েছে, যেমন নারকেল পুলি, দুধ পুলি, ঝাল পুলি, ইত্যাদি।
পাটিসাপটা:
পাটিসাপটা হলো এক ধরনের রুটি জাতীয় পিঠা। চালের গুঁড়া, নারকেল, চিনি, ইত্যাদি
দিয়ে তৈরি এই পিঠাকে তেলে ভেজে বা ভাপে রান্না করা যায়। পাটিসাপটা সাধারণত
ত্রিভুজাকার বা চৌকো আকারে কেটে পরিবেশন করা হয়।
নকশি পিঠা:
নকশি পিঠা হলো এক ধরনের সুন্দর ও জটিল নকশার পিঠা। চালের গুঁড়া, নারকেল, চিনি,
ইত্যাদি দিয়ে তৈরি এই পিঠাকে তেলে ভেজে বা ভাপে রান্না করা যায়। নকশি পিঠার
নকশা সাধারণত হাত দিয়ে তৈরি করা হয়।
এছাড়াও, শীতকালে আরও অনেক ধরনের পিঠা তৈরি করা হয়, যেমন:
- মালাই গুড়ের ভাপা পিঠা
- বড়া পিঠা
- পাটিসাপটা পিঠা
- নকশি পিঠা
- ঝিনুক বা খেজুর পিঠা
- গোবিন্দভোগ পিঠা
- পাবদা পিঠা
- চাল পিঠা
- ঝাল পিঠা
- কলা পিঠা
- ক্ষীর পিঠা
- ইলিশ পিঠা
বাঙালি সংস্কৃতিতে পিঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। শীতকালে পিঠা
উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ সময় বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি ও পরিবেশন করা হয়।
আসুন শীতের কিছু ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় পিঠাতে তৈরি করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে
নিই,
ভাপা পিঠা তৈরির নিয়ম
জনপ্রিয় পিঠা পুলির মধ্যে শীতকালে যে সকল জনপ্রিয় পিঠা তৈরি করা হয় তার মধ্যে
ভাপা পিঠা অন্যতম।ভাপা পিঠা সাধারণত শীতের সকালে তৈরি করা হয়, বিশেষ করে গ্রাম
অঞ্চলে পিঠা ছাড়া শীতের সকাল কল্পনা করা যায় না।শীতের সময় গ্রামের মোড়ে মোড়ে
তৈরি করে বিক্রয় করে থাকে। অনেকে বাহিরের খাবার খেতে চাই না তাই বাসায় তৈরি
করার চেষ্টা করে থাকে। আজকে আমি বাসায় কিভাবে ভাপা পিটা তৈরি করবেন সে সম্পর্কে
আলোচনা করব
ভাপা পিঠা তৈরি করার উপকরণ
- দুই থেকে তিন কাপ চালের গুড়া
- এক কাপ কোরা নারিকল
- এক কাপ গুড়
- পরিমাণ মতো লবণ
- পিঠা বানানো বাটি
- একটি ছিদ্রযুক্ত ঢাকনা সহ হাড়ি
- পাতলা সুতি কাপড়
পিঠা তৈরির প্রস্তুত প্রণালী
প্রথম ধাপ
একটি বড় কোন পাত্রে তাতে চালের গুড়া নিয়ে তার সাথে প্রয়োজন পরিমাণে লবণ
মিশিয়ে নিতে হবে,এবারে চালের গুড়ার উপর প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে ভালোভাবে মিশে
নিতে হবে। পুরো জল একবারের দেয়া যাবে না অল্প অল্প করে পানি দিতে হবে এবং মিশাতে
হবে। মাখতে মাখতে হাতের তালুতে নিয়ে চেপে বল তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে। যদি বল
ভেঙে না যায় তাহলে বুঝতে হবে চালের গুড়া তৈরি হয়ে গেছে। এরপর চালের গুড়া রেখে
পরবর্তী দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু করতে হব।
দ্বিতীয় ধাপ
দ্বিতীয় ধাপে প্রথমে চালের পানি মাখানো গুড়া গুলো চালোনি দিয়ে ভালোভাবে চেলে
নিতে হবে। যেন তাদের গুড়ার সাইজ গুলো সব সমান হয়। কারণ যখন পানি দিয়ে চালের
গুড়া মেশানো হয় তখন অনেক ছোট বড় সাইজের দলা তৈরি হয়, এবার চালুনির উপর বড়
বড় দলগুলো হাতের ঘষার মাধ্যমে ভেঙে নিতে হবে আবার ছোট করে নিতে হবে চালুনি দিয়ে
চেলে নিতে হবে।
তৃতীয় ধাপ
ভাপা পিঠা তৈরি করতে তৃতীয় ধাপে যা করতে হবে সেটা হচ্ছে একটি ছিদ্রযুক্ত মাটির
হাঁড়ির বস কলশি অর্ধেক পরিমাণ পানি দিয়ে চুলার উপরে রেখে জ্বালানি দিয়ে জাল
দিতে হবে। এমন পরিমাণে জাল দিতে হবে যেন হাড়ি বা কলসি দিয়ে পানির বাষ্প হতে শুরু
করে। হাড়ি বা কলসি দিয়ে পানি প্রয়োজনে কলসির উপর হাত দিয়ে যদি আপনার হাত ভিজে
যায় তাহলে ভাববেন পিঠা তৈরি করার জন্য পানি প্রস্তুত হয়ে গেছে।
চতুর্থ ধাপ
পিঠা তৈরি করার জন্য পানি গরম হয়ে গেলে একটি ছোট বাটিতে অর্ধেক চালের গুড়া
মিশ্রণ নিন, এবার এর উপর পছন্দমত কোরা নারিকেল ও মিষ্টি স্বাদমতো গুড় দিয়ে তার
ওপর আরো অর্ধেক চালের গুড়া দিয়ে ঢেকে দিন। তবে লক্ষ রাখতে হবে কোনভাবে যেন চেপে
না বসানো হয় তাহলে পিঠার ভিতরে বাষ্পিত গরম পানি যেতে পারবেনা আর গরম পানি যেতে
না পারলে চালের গুড়ায় আঠা ধরবে না মানে পিঠা ভালো হবে না।
পঞ্চম ধাপ
ভাপা পিঠা তৈরি করতে পঞ্চম ধাপে যা করতে হবে সেটা হচ্ছে একটি সুতির পাতলা ভেজা
কাপড় বা পাতলা যে কোন কাপড় দিয়ে বাটিটি ঢেকে পিঠাটি মাটির হাঁড়ির মুখের উপর
বসিয়ে দিতে হবে।বাটিতে হাঁড়ির কলসির মুখের উপর এমন ভাবে বসাতে হবে যেন হাড়ের
বাষ্পিত গরম পানি যেন কোন পাশ দিয়ে বের হয়ে না যায়। তারপরে তার থেকে পাঁচ
মিনিট পরে চেক করতে হবে পিঠা হয়েছে কিনা,পিঠা হয়ে গেলে নামিয়ে নিন এভাবে একই
নিয়মে বানিয়ে ফেলুন। ভাপা পিঠা স্বদ পেতে গরম গরম পরিবেশন করতে পারেন।
দুধপুলি পিঠা তৈরি করার নিয়ম
শীতে যে সকল পিঠা খুবই জনপ্রিয় তার মধ্যে দুধ পুলি পিঠা অন্যতম, শীতে পিঠাপুলির
তালিকায় দুধপুলি পিঠা না থাকলে যেন তা অসম্পূর্ণ থেকে যায় তাই আজকে আমরা শীতের
জনপ্রিয় দুধপুলি পিঠা তৈরি করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব।
দুধপুলি পিঠা তৈরি করতে যা যা লাগবে
১। চালের গুড়া দুই কাপ
২। গুড় আধা কাপ
৩। তেল চা-চামচ
৪। নারিকেল কুচি এক কাপ
৫। চিনি পাঁচ চা-চামচ
৬। দুধ ২ লিটার
৭। লবন পরিমান মতো
৮। এলাচ ৪টি
৯। লবঙ্গ ৩টি
১০। সামান্য পরিমান কালিজির
দুধ পুলি পিঠা তৈরি করার নিয়ম
প্রথম ধাপ
প্রথমে একটি পাত্রে পানি গরম করে তাতে ২ চা চামচ চিনি ও ১চামচ তৈল দিয়ে দিন,
তারপর চিনি গলে গেলে তাদের চালের গুড়া দিয়ে ভালোভাবে নাড়ুন, আটা সিদ্ধ হলে
পাত্র নামিয়ে ফেলুন।
দ্বিতীয় ধাপ
অন্য একটি প্রাএে তেল গরম করে লবঙ্গ, এলাচ এবং নারিকেল দিয়ে পাঁচ মিনিট হালকা
করে জ্বাল দিন গুড় না গলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ভালোভাবে নাচতে থাকুন মিনিট পাঁচ
পরে নামিয়ে ফেলুন।
তৃতীয় ধাপ
এবার সেদ্ধ করার আটা দিয়ে গোল করতে হবে এবার তার ভেতর নারিকেল দিয়ে ভাঁজ করে
ভালো করে আটকে দিতে হবে। বানানো হয়ে গেলে অন্য বাটিতে তেল দিয়ে হালকা করে ভেজে
নিন
চতুর্থ ধাপ
এবার অন্য একটি পাএে চিনি মিশিয়ে জাল দিন, জাল দেয়া অবস্থাই দুধের মধ্যে পিঠা
দিয়ে দিন।নামিয়ে ঠান্ডা করে পরিবেশন করতে পারেন দুধপুলি পিঠা
উপসংহার:
ভাপা ও দুধপুলি একটি অতি জনপ্রিয় পিঠা হলেও এটি তৈরি করতে তেমন কোন ঝামেলা
পোহাতে হয় না। প্রয়োজনীয় উপকরণ গুলোর ব্যবস্হা করে বাসা বাড়িতে বানিয়ে
খাওয়া যেতে পারে। শীতের সকালে গরম গরম ভাপা পিঠার মজাই আলাদা। সেই সাথে দুধ
পুলিতো আছেই, তাই আপনি ইচ্ছে করলেই যেকোনো সময়ে বাড়ীতে দুধ পুলী পিঠা এবং ভাপা
পিঠা তৈরি বা বানিয়ে ফেলতে পারেন।
প্রিয় পাঠক আজ শীতের কিছু জনপ্রিয় পিঠা বা ভাপা পিঠা তৈরির
নিয়ম, শীতকালের পিঠার নাম নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামীতে অন্য কোন টপিক নিয়ে
হাজির হবো।
জমজম আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url