বয়স অনুযায়ী বাচ্চাদের বিকাশের আচরণ
ভূমিকা
প্রিয় পাঠক আপনি অনেক খোঁজাখুজির পর নিশ্চয়ই বয়স অনুযায়ী বাচ্চাদের বিকাশের আচরণ কি তা জানার জন্যই আমাদের এই সাইটটিতে এসেছেন।
হ্যাঁ আজকে আমি সঠিকভাবে বয়স অনুযায়ী বাচ্চাদের বিকাশের আচরণ নিয়ে আলোচনা করব।
এই লেখার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।
শিশু কত বছর বয়স পর্যন্ত
আমাদের দেশের বিদ্যমান অন্য কোন আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, শিশু
আইন অনুযায়ী অনুর্ধ্ব ১৮ (আঠার) বছর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যক্তি শিশু হিসাবে
গণ্য হইবে।
বয়স অনুযায়ী বাচ্চাদের বিকাশের আচরণ
শিশুদের উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য হলো-
- প্রতিটি শিশু এক নয়। প্রত্যেক শিশুই অপর শিশু থেকে আলাদা।
- শিশুদের পছন্দ, চাহিদা ও শিখনের ধরন আলাদা আলাদা হয়, যা মূলত গড়ে ওঠে তার বেড়ে ওাা পরিবেশের ওপর নির্ভর করে।
- শিশু আদর ও ভালোবাসা পেতে এবং বড়দের কাছে গ্রহণীয় হতে চায়।
- শিশুরা অনুসন্ধিৎসু হয়। ফলে তারা নানা বিষয়ে অনেক প্রশ্ন করে জানতে ও বুঝতে চেষ্টা করে।
- নানা রকম কাজ, অভিজ্ঞতা ও কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে নিজস্ব সত্তাকে প্রকাশ করতে পছন্দ করে।
- শিশু নিজের মত করে পৃথিবীকে দেখে, বড়দের মত করে নয়। তারা কল্পনা প্রবণ। শিশু কল্পনা এবং বাস্ত বের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনা।
- শিশু নিজেকে হাতি, ঘোড়া, ভালুক, প্রভৃতি কল্পনা করে। খেলার ভিতর দিয়ে নিজের ব্যক্তিত্বের উপর নানা রকম অভিজ্ঞতা যুক্ত করে।
শিশু এবং বয়সভেদে শিশুর আচরণ ও বৈশিষ্ট্য
- নানা রকম রূপকথার গল্প, ছেলে ভুলানোর ছড়া ইত্যাদি শুনতে খুবই ভালোবাসে। এগুলো শিশুর কল্পনাকে সমৃদ্ধ করে।
- শিশু তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বোঝার চেষ্টা করে। অন্যের কাজকে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচার করে।
- বিশ্ব জগতের অধিকাংশ সামগ্রীকে সে জীবন্ত মনে করে, কারণ অন্যান্য প্রাণি ও ব¯‘র মধ্যে সে নিজের মনের অনুভ‚তি ও আবেগ আরোপ করে।
- সাধারণত কোনো কিছুতে বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না।
- খেলে এবং নানারকম কাজ করে শেখে।
- আত্মকেন্দ্রিক হয়। তার চিন্তা-ভাবনা নিজেকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়।
- সহজে ভাষা আয়ত্ব করে।
- আমিত্ববোধের সৃষ্টি হয়।
- প্রচলিত আচার-আচরণ, রীতিনীতির ও সংস্কারের প্রতি সাধারণ বিশ্বাস ও আনুগত্যের সঞ্চার হয়।
- বয়ঃসন্ধিকালে অন্যের সঙ্গে নিজের মনোভাবের দ্ব›দ্ব সৃষ্টি হয়। যার ফলে মনে বিদ্রোহের ভাব সৃষ্টি হয়।
- শিশুরা চঞ্চল ও প্রাণবন্ত। তাই ছুটাছুটি, লাফ-ঝাপ, দাপাদাপি অধিক পরিমাণে করে।
- শিশু তার স্বভাবসুলভ কারণেই চারপাশের পরিবেশকে আবিষ্কার করতে চায়। পরিবারের সীমান ছাড়িয়ে বিদ্যালয়ে, খেলার মাঠে এবং বন্ধু বান্ধবের দলে নেতৃত্ব দান করে। ফলে সে বহির্ম‚খী জীবনের স্বাদ পায়।
- শিশুরা আনন্দপ্রিয় হয়। তারা নানা আনন্দজনক কাজ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখতে ও যুক্ত হতে পছন্দ করে।
- খেলা ও খেলনা বেশি পছন্দ করে। খেলাই শিশুর প্রধান কাজ এবং খেলার মাধ্যমে শিখতে পছন্দ করে।
- আপনার শিশুরা কৌতুহলী হয়। তার স্বভাবসুলভ কারণেই বিভিন্ন বিষয়ে নানা ধরনের প্রশ œকরে জানার ও বোঝার চেষ্টা করে।
- অনুকরণ প্রিয়। তারা তাদের চারপাশের বড়দের ও সঙ্গীদলের সদস্যদের অনুকরণ করে শিখে।
বয়স অনুযায়ী বাচ্চাদের বিকাশের আচরণ
১ মাস
একটি নবজাতক শিশুর জন্য ঘুম একটি অতি পরিচিত শব্দ। শিশুর প্রথম এক মাস বয়সে
বেশির ভাগ সময় শিশু ঘুমিয়ে কাটিয়ে থাকে। এর চেয়ে বেশিকিছু করা শিশুর আয়ত্তে
থাকে না। কিন্তু কিছু ব্যাপার শিশুর এক মাস বয়সেই করা উচিত। যেমন- গালে বা
মাথায় হাত বোলালে সেদিকে মাথা ঘোরানো, উভয় হাত মুখের দিকে আনা, পরিচিত গলার
আওয়াজ বা শব্দ শুনলে সেদিকে ঘোরা, স্তন চোষা এবং হাত দিয়ে ছোঁয়া। এ সকল কিছু
প্রতিটি শিশুর এই বয়সে করতে পারা উচিত।
১ মাস থেকে দেড় মাস বা ৪৫ দিন
শিশু বুঝে, হাসতে শেখে। ঘুমের মধ্যে বা অকারণে হাসা শিশুরা জন্ম থেকেই করে।
কিন্তু পরিচিত মুখ দেখে বা শব্দ শুনে, বুঝে হাসতে শেখা দেরি হলে শিশু
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
৩ মাস
নরম ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। ঘাড় সোজা করে, মাথা ঘুরিয়ে এদিক-ওদিক দেখতে শিখে। দেরি
হলে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। ছোট ছোট অনুকরণ করতে পারে। যেমন- কেউ
জিহ্বা বের করলে সেও বের করে।
৫ মাস
সাপোর্ট দিলে বসতে পারে। একা একা কয়েক সেকেন্ড পরেই ডান বা বামে ঢলে পড়ে।
৬-৭ মাস
নাম ডাকলে সারা দেয়। ৭ মাস-একা বসে তবে পিঠ সোজা করে বসতে পারে না। সামনে কোনো
জিনিস ধরলে হাত বাড়ায়, ধরে। ফেরত চাইলে দিয়েও দেয়। মুখে শব্দ করা শিখে। বাব্
বাব্ কিংবা দাদ্, দাদ্ বলে। আপন-পর বুঝতে শিখে।
৮ মাস
সোজা করে বসতে শিখে। চিৎ থেকে উপুড় এবং উপুড় থেকে সোজা হতে পারে। হাত তালি দিতে
শিখে।
৯-১০ মাস
হামাগুঁড়ি দেয়। জিনিস ধরে দাঁড়াতে শিখে। পরিষ্কার শব্দ বলা শুরু করে। বাই বাই
করতে শেখে।
১১-১২ মাস
নিজে নিজে মুখে খাবার দিতে চেষ্টা করে। তর্জুনি বা বৃদ্ধাঙ্গুলি ব্যবহার করে
মুড়ি বা ছোলার মতো বস্তু ধরার চেষ্টা করে। কোনোকিছুর প্রতি নির্দেশ করতে পারে।
হাত ধরলে হাঁটতে পারে।
১৮ মাস
একা কয়েক ধাপ হাঁটতে পারে। ২ শব্দের বাক্য বলতে পারে।
২৪ মাস
শব্দভাণ্ডার ১০০ এর বেশি হয়। দুই বা তিন শব্দের বাক্য বলে। ৪টি কিউব দিয়ে
টাওয়ার বানাতে পারে। বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে পারে।
৩ বৎসর
সাচ্ছন্দ্যে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারে। নিজে নিজে পোশাক পরার চেষ্টা করে। ছেলে বা
মেয়ে হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে। ছোট ছোট গল্প বলতে পারে।
৪-৫ বৎসর
পরিবেশ থেকে সবকিছু শিখতে চায়। ভালো-মন্দ আলাদা করতে পারে । সমবয়সীদের সঙ্গে
খেলতে পারে। প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারে, সংখ্যা চিনতে শিখে।
শিশুর বিকাশ ও শিখন আচরণ (তথ্যপুস্তক) এখান খেকে ডাউনলোড করে রাখতে পারেন।
ডাউনলোডে জন্য
এখানে চাপ দিন।
বাচ্চারা কত মাসে বসে
বাচ্চারা সাধারণত 6-8 মাস বয়সে বসে। তবে, কিছু শিশু 4-5 মাস বয়সেই বসতে শুরু
করতে পারে, আবার কিছু শিশু 10 মাস বয়সেও বসতে পারে। বাচ্চাদের বসার সময়
নির্ভর করে তাদের শারীরিক বিকাশ, পেশীর শক্তি এবং সমন্বয়ের উপর।
বাচ্চারা বসার আগে নিম্নলিখিত দক্ষতাগুলো অর্জন করে:
- মাথা উঁচু করে ধরা
- বুক উঁচু করে ধরা
- হাতে ভর দিয়ে মাথা তুলে বসা
- হেলান দিয়ে বসা
বাচ্চারা যখন প্রথমে বসে, তখন তারা সাধারণত ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা হয়।
তারা প্রায়ই হঠাৎ করে হেলে পড়ে। তবে, ধীরে ধীরে তাদের ভারসাম্য বজায় রাখার
ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
বাচ্চাদের বসার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:
আপনার বাচ্চাকে সোজা করে শুইয়ে দিন এবং তার পায়ে ভর দিয়ে মাথা তুলতে
সাহায্য করুন।
বাচ্চাকে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিন এবং তার হাত ধরে রাখুন।
আপনার বাচ্চাকে আপনার কোলে বসিয়ে দিন এবং তার হাত ধরে রাখুন।
বাচ্চারা বসার সাথে সাথে তাদের চারপাশের জগত সম্পর্কে জানতে শুরু করে। তারা
তাদের হাত দিয়ে জিনিসপত্র ধরতে এবং খেলতে শুরু করে।
বাচ্চারা উপুড় হয় কত মাসে
বাচ্চারা সাধারণত 3-4 মাস বয়সে উপুড় হতে শুরু করে। তবে, কিছু শিশু 2 মাস বয়সেই উপুড় হতে পারে, আবার কিছু শিশু 6 মাস বয়সেও উপুড় হতে পারে। বাচ্চাদের উপুড় হওয়ার সময় নির্ভর করে তাদের শারীরিক বিকাশ, পেশীর শক্তি এবং সমন্বয়ের উপর।উপসংহার
প্রিয় পাঠক আজ বয়স অনুযায়ী বাচ্চাদের বিকাশের আচরণ নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামীতে অন্য কোন টপিক নিয়ে হাজির হবো।
জমজম আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url